মহসীন শেখ

পবিত্র আল্লাহ্র ঘর তাওয়াফকালেই মাকামে ইব্রাহিমে অন্তত একবার হলেও দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে দেখেন হজরত ইব্রাহিম (আ)-এর পায়ের চিহ্নটি। সেখানে সবাই দু’রাকাত নামাজ আদায় ও দোয়া পড়েন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো পবিত্র ওই স্থানে দাঁড়াতে গেলেই নিজ দেশ থেকে কা’বা শরীফ তাওয়াফ করতে যাওয়া হাজীদের সাথে দেখা হয়। সেসময় পবিত্র স্থানে নিজের দেশের পরিচিত ব্যক্তিদের দেখে খুবই আনন্দ হয়। ওমরাহ্ হজ্জে গিয়ে প্রথমদিকে আল্লাহ্র ঘর তাওয়াফকালে দেখা হয় কক্সবাজার সদর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য মাহমুদুল করিম মাদু, সাবেক কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ নেতা সৌদিআরবের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন হেলাল ও তার দুই বড় ভাই আজিজ এবং গিয়াস, ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ, কাজল, খুরুসকুলের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম, কক্সবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও তরুণ আওয়ামীলীগ নেতা কাজী মোরশেদ আহমদ বাবু স্ব-পরিবারে ওমরাহ্ হজ্জ পালনে যাওয়া কক্সবাজার শহরের কলাতলীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সবুর, মক্কায় প্রতিষ্ঠিত হজ্জ এজেন্সি ব্যবসায়ী মাহবুব, নসরুল, ঘোনার পাড়ার বাসিন্দা মক্কায় কার্গো ব্যবসায়ী মনছুর, বন্ধু মনির ইসলাম ছোট্টু, মোহজের পাড়ার বন্ধু আরিফ, ছোট ভাই খোকা ও হাসান, সহপাঠি এহসান ও বার্মিজ মার্কেটে অবস্থিত আলমাস কমপ্লেক্সের মালিক হাবিব সহ আরো কয়েকজন পরিচিতজনদের সাথে। তবে কক্সবাজার থেকে পবিত্র হজ্জ, ব্যবসা অথবা চাকুরী যাওয়া ছাড়াও বিশেষ করে রাজনৈতিকদলের নেতা কর্মীরা একটিবার হলেও পা ফেলেন পবিত্র হেরাম শরীফের পাশে অবস্থিত সাবেক ছাত্রনেতা আমার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা জসিম উদ্দিন হেলালের বিখ্যাত বুশরা নামক খেজুরের দোকানে। সেখানেই অধিকাংশ পরিচিত প্রিয়জনদের দেখা মিলে। আরবে আপনজনদের দেখে সত্যিই অনুভুত হয় অন্যরকম আনন্দ। আল্লাহ্পাকের বুহু নিদর্শন ঘেরা জীবন্ত ইসলামকে দেখতে সকল মুসলমানকে অন্তত একটিবার পবিত্র সৌদিআরব দেখার সুযোগ হোক, আমীন।

এবার যাই মাকামে ইব্রাহিমের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস শরীফে বর্ণিত কিছু ইতিহাসে।

কাবার অলৌকিক আকর্ষণে দূর-দূরান্তের মুমিন বান্দাগণ জীবনের অর্জিত অর্থ ব্যয় করে আল্লাহর মহব্বতে ছুটে যান মক্কা মুয়ায্যমায় পবিত্র আল্লাহর ঘর কাবা শরিফ তাওয়াফ করতে। আল্লাহ সদয় হয়ে যাদের ডাক দিয়ে থাকেন, তারাই আল্লাহর ঘরে হাজির হওয়ার তওফিক লাভ করেন, তারা আল্লহর ডাকে সাড়া দিয়ে বলেন, লাব্বায়িকা আল্লাহুমা লাব্বায়িক। তাওয়াফকালে বহু রহস্যে হয় আল্লাহ তাআলার বেশকিছু নিদর্শনকে দেখার হয় মুসলমানদের। তারই ধারাবাহিকতায় পবিত্র কা’বা তাওয়াফকালে বহুবার দেখার সুযোগ পেয়েছি পবিত্র কাবা শরীফের মূল দরজার পাশে থাকা মাকামে ইব্্রাহিম অর্থাৎ যে পাথরে দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস আল্রাহর ঘর নির্মাণ কাজ করেছেন সেই পাথরটি। যে পাথরে দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস আল্রাহর ঘর নির্মাণ কাজ করেছেন। এই স্থানে দাড়িয়ে দোয়া করার সুযোগ দান করেছেন আল্লাহ্পাক। আজও এ পাথরে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের কদম মুবারকের চিহ্ন বিদ্যমান।

মুসলমানদের কিবলা কাবাঘর আল্লাহ তাআলার এক অপূর্ব সৃষ্টি। স্বর্ণের প্রলেফ দিয়ে তৈরী কাবা শরিফের দরজার পাশেই আছে ক্রিস্টালের একটা সোনারী রংয়ের বাক্স, চারদিকে লোহার বেষ্টনী। ভেতরে বর্গাকৃতির একটি পাথর। পাথরটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সমান, প্রায় এক হাত। এ পাথরটিই মাকামে ইব্রাহিম। মাকাম শব্দের অর্থ হচ্ছে দাঁড়ানোর স্থান অর্থাৎ হজরত ইব্রাহিম (আ)-এর দাঁড়ানোর স্থান। এ পাথরে দাঁড়িয়ে তিনি কাবা শরিফ নির্মাণ করেন। কাবা শরিফ থেকে মাকামে ইব্রাহিমের দূরত্ব হচ্ছে ২৭ হাত। মাকামে ইব্রাহীম অর্থাত আল্লাহর ঘরের দরজার সামনে হযরত আদম (আ) নামাজ পড়েছেন এবং তাঁর পাশেই হযরত জিব্রাইল (আ) নামাজ পড়ে নবী করিম (সা) কে নামাজের প্রথম সময় ও শেষ সময় এবং নামাজের তরীকা সম্বন্ধে ধারণা দিয়েছেন।

এজন্য এই জায়গাটাকে মুসল্লায়ে আদম বা মুসল্লায়ে জিব্রাঈল বলা হয়।

হাদিস শরীফে বর্ণিত- মাকামে ইব্রাহিম অর্থাৎ অর্থাৎ যে পাথরে দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস আল্লাহ্র ঘর নির্মাণ কাজ করেছেন হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মতে, মাকামে ইবরাহিম ঐ পাথরকে বলা হয়। যে পাথরে দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস আল্রাহর ঘর নির্মাণ কাজ করেছেন। এই স্থানে দাড়িয়ে দোয়া করার সুযোগ দান করেছেন আল্লাহ্পাক।

এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর ঘর নির্মাণের সময় যখন দেয়াল ক্রমান্বয়ে উঁচু হতো তখন ঐ পাথরও হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে নিয়ে ওপরে উঠতো।

হজের সঙ্গে রয়েছে বিশ্বাসীদের আদি পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) এবং তদীয় পুত্র হজরত ইসমাইল(আ.)-এর স¤পর্ক। আল্লাহর নির্দেশে তিনি কাবাগৃহ পুনর্নির্মাণ করেন। জান্নাতের একটি পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি কাবাগৃহের নির্মাণ কাজ স¤পন্ন করেন। এ পাথরটি প্রয়োজন সাপেক্ষে ইব্রাহিম(আ.)-কে উপরে তুলে ধরত, আবার যখন ইব্রাহিম (আ.) নিচে কাজ করতেন, তখন পাথরখানা নিচে নেমে যেত। ইব্রাহিম (আ.)-এর পবিত্র পায়ের ছাপ এখনো পাথরের গায়ে দেখা যায়। হাজীরা মাকামে ইব্রাহিমের পাশে দাঁড়িয়ে যে দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন এই দুই রাকাত নামাজ হজের

অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) অক্লান্ত পরিশ্রমের পর কাবা শরিফের সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের কাজ স¤পন্ন করেন। কাবাঘর পুনর্নির্মিত হলে আল্লাহপাক হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে মাকামে ইব্রাহিমে দাঁড়িয়ে আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা শরিফে হজব্রত পালন করার বিশ্বব্যাপী উদাত্ত আহ্বান জানানোর জন্য আদেশ করেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) বলেন, হে আল্লাহ! এই আহ্বান কি বিশ্বের সর্বত্র পৌঁছানো সম্ভব? আল্লাহ প্রতি উত্তরে বলেন, হে ইব্রাহিম! তোমার এই আহ্বান পৃথিবীর সব প্রান্তে এবং আজ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত যারা হজ পালন করবে, তাদের প্রত্যেকের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার। তুমি শুধু আহ্বানকারী, আহ্বান করা তোমার কাজ। আল্লাহতায়ালা সেই ডাক ওই সময়ের শুধু জীবিত মানুষই নয়, বরং যারা মায়ের গর্ভে, বাপের পৃষ্ঠ ও রূহ জগতে ছিল, যারা কেয়ামত পর্যন্ত এই দুনিয়াতে আসবে তাদের কানেও পৌঁছে দিলেন। আর এই ডাক যে যতবার শুনেছে, সে ততবারই আল্লাহতায়ালার দরবারে হাজির হওয়ার তাওফিক লাভ করবে। সেই দিনকার এই আওয়াজে যারা লাব্বাইকা আল্লাহুমা লাব্বাইকা বলেছেন, তাদের প্রত্যেকের ভাগ্যেই আল্লাহতায়ালা হজ লিখে দিয়েছেন।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক সকালের কক্সবাজার। মোবাইল:- ০১৬১৯০৭০৫১৩